মোহাম্মদ আব্দুল হক::
ছোট্ট শহর সুনামগঞ্জ। যখন মহকুমা টাউন ছিলো তখন - তো ছোটো ছিলো-ই। পরে যখন জেলা শহর হিসেবে প্রকাশিত হলো তখনও ছোটো শহর সুনামগঞ্জ। পুরাতন পৌরসভা এলাকার আয়তন বেড়েছে ঠিকই, তারপরও সুনামগঞ্জ পৌরসভা শহর হিসেবে এখনও সুনামগঞ্জ সেই ছোটো শহরই। এই শহরের অল্প কয়েকটি পয়েন্ট আছে; তবে প্রতিটি পয়েন্টের রয়েছে হাজার হাজার গল্প। এখানে একটি পয়েন্টের গল্প বলতে ইচ্ছে করছে। সুনামগঞ্জ শহরের ঠিক মধ্যে আছে একটি বালিকা বিদ্যালয়, নাম হচ্ছে সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সর্বজনের মুখে ‘গার্লস ইস্কুল’ হিসেবে পরিচিত। এই স্কুলের অগ্নি কোণে একটি পয়েন্ট আছে যেটিকে আমরা গার্লস ইস্কুলের পয়েন্ট নামে চিনতাম। গার্লস ইস্কুলের কিছুটা উত্তরে সুরমা নদীর একেবারে কাছাকাছি একটি স্কুল আছে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়। এটি পুরোপুরি ছেলেদের স্কুল। এই উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম বা দশম শ্রেণির ছেলেদের বয়সী আকর্ষণ গার্লস ইস্কুলের দিকে থাকাটা ছিলো স্বাভাবিক। এমন ছাত্র খুব কমই পাওয়া যাবে যারা টিফিন পিরিয়ডের সময়ে জীবনে কমপক্ষে একবার হলেও ওই গার্লস ইস্কুলের পয়েন্ট ঘুরে আসেনি। গার্লস ইস্কুলের অষ্টম, নবম বা দশমের মেয়েরাও যে তাদের ক্লাস রুমের জানালা দিয়ে তাকাতো না বা একবার হলেও একটু দূরের রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া সুন্দর ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখেনি সেটা-ই-বা বলি কেমন করে। হ্যাঁ, কেউ কেউ হয়তো প্রেমের টানেও ওই সময় গার্লস ইস্কুলের রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসতো। শিশু বয়স বা বাল্যকালের ওই ধরনের প্রেমের টানকে ইনফ্যাচুয়েশন বা মোহগ্রস্ততা বা মায়া বলা যেতে পারে। এ কারণেই গার্লস ইস্কুলের পয়েন্ট ছেলেদের মুখে মুখে এক অতি পরিচিত পয়েন্ট হয়েছিলো। সে যা-ই হোক। এক সময় সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হলেন কবি দেওয়ান মমিনুল মউজীন। তিনি ওই গার্লস ইস্কুলের পয়েন্টের গুরুত্ব বুঝতে পেরে, ওই পয়েন্টে বকের ভাস্কর্য স্থাপন করলেন। পয়েন্টের মধ্যখানে একটা জলাধার এবং তাতে চারটি সাদা বক। বেশ দৃষ্টিনন্দন। সেই থেকে ধীরে ধীরে সুনামগঞ্জের গার্লস ইস্কুলের পয়েন্ট হয়ে গেল ‘বক পয়েন্ট’। যেহেতু এধরনের সৌন্দর্য্য সুনামগঞ্জে এটি প্রথম প্রকাশ হয়েছে, তাই মানুষের কৌতূহল বেড়েছিলো এবং মুখে মুখে বক পয়েন্ট নামটি প্রচার হতে থাকে। অনেক মানুষ ক্যামেরা নিয়ে তখন ওই বক পয়েন্টে গিয়ে বকের ভাস্কর্য নিয়ে ছবি তুলেছে। এভাবেই চললো বহু বছর। এক সময় সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ স¤পাদক আয়ূব বখত জগলুল। তিনিও মধ্য শহরের ওই পয়েন্টের গুরুত্ব অনুধাবন করে, সেখানে আরো সুন্দর কিছু করায় মনোযোগ দিলেন। বক পয়েন্টের আয়তন বর্ধিত করেছেন এবং আরো সুন্দর করে সাজিয়ে নামকরণ করেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ‘হোসেন বখত চত্বর’। আমার ভালো লেগেছে এখন মানুষ ধীরে ধীরে ইংরেজি শব্দ পয়েন্ট বলা বাদ দিয়ে একান্ত আমাদের নিজস্ব বাংলা শব্দ চত্বর বলতে শিখে যাচ্ছে। হ্যাঁ, তিনি তাঁর সুন্দর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন কাজ মানুষকে, পৌরবাসীকে উপহার দিয়েছেন। প্রিয় পাঠক, আমার বিয়ের বরযাত্রার গাড়ি বহর যখন ১৯৯৭ খ্রীষ্টিয় সালের ২ মে দুপুরে ওই পয়েন্ট ঘুরে যাচ্ছিলো তখন ভিডিওতে বক পয়েন্টের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিলো এবং ইয়াশিকা ক্যামেরায় বক পয়েন্টের ছবি উঠানো হয়েছিলো। অনেক বছর পরে সিডি প্লেয়ার চালিয়ে দেখে মনে পড়ে গেল। তাই অল্প গল্প করলাম। সবার জন্যে ভালোবাসা। [লেখক: মোহাম্মদ আব্দুল হক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক]
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
একটি পয়েন্টের অল্প গল্প
- আপলোড সময় : ১১-০৪-২০২৫ ০১:৫৫:৫০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-০৪-২০২৫ ০৯:৫৭:২৮ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ